জ্যাকসন হাইটসে মেয়র প্রার্থী মামদানি ও কোমো

নিউইয়র্ক (ইউএনএ)ঃ আগামী ৪ নভেম্বর মঙ্গলবার অনুষ্ঠিতব্য নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জোহরান মামদানিকে সমর্থন জানিয়েছে জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশী বিজনেস এসোসিয়েশেন—জেবিবিএ। গত ৮ অক্টোবর বুধবার সন্ধ্যায় জেবিবিএ এর উদ্যোগে জ্যাকসন হাইটসের সানাই রেস্টুরেন্টে এ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সবাইকে নিয়ে সুন্দর সিটি গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়। জেবিবিএ’র সভাপতি গিয়াস আহমেদের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে জেবিবিএ’র পক্ষ থেকে মামদানিকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। অনুষ্ঠানে মেয়র প্রার্থী জোহরান মামদানি তার বক্তব্যে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের সমর্থনকে ধন্যবাদ জানিয়ে সবাইকে নিয়ে সুন্দর সিটি গড়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। মামদানি বলেন, একজন মুসলিম মেয়রকে বিজয়ী করে ইতিহাস সৃষ্টি করার সময় এসেছে। কারণ একজন ভালো মুসলমান মানে একজন ভালো মানুষ। তিনি বলেন, আমরা এক সাথে ইতিহাস সৃষ্টি করতে চাই, যেটা হতে পারে নিউইয়র্ক সিটির ইতিহাসে প্রথম মুসলিম মেয়র। তিনি তার বক্তব্যে আবারো বাংলাদেশী আন্টিদের কথা স্মরণ করে বলেন এবার সময় এসেছে বাংলাদেশী আঙ্কেলদের মেয়র নির্বাচনে ভূমিকা রাখার।
অনুষ্ঠানে জেবিবিএ’র প্রধান উপদেষ্টা শাহ নেওয়াজ, সাধারণ সম্পাদক তারেক হাসান খান, ইমাম শামসী আলী, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ফাতেমা গ্রুপের চেয়ারম্যান হাজী শামসুল ইসলাম, বাংলাদেশ সোসাইটির ট্রাস্টিবোর্ড সদস্য ও জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির সভাপতি ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন এবং মামদানিকে সমর্থন জানিয়ে নভেম্বরের মেয়র নির্বাচনে তাকে ভোট দেয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম, সিনিয়র সহ সভাপতি মহিউদ্দিন দেওয়ান, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী, ট্রাস্টি বোর্ড মেম্বার আব্দুর রহিম হওলাদার, কোষাধ্যক্ষ মফিজুল ইসলাম রুমি, মূলধারার রাজনীতিক এটনীর্ মঈন চৌধুরী, ড্রাম—এর অর্গানাইজিং ডিরেক্টর কাজী ফৌজিয়া, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হারুন ভূইয়া, কামরুজ্জামান কামরুল, বিলাল চৌধুরী, রিয়েল এস্টেট ব্রোকার নাঈম আহমেদ, কর্ণফুলী হোম কেয়ার সার্ভিসেসের কর্ণধার মোহাম্মদ হাশেম, ইঞ্জিনিয়ার আবুল হাসান, জেড আলম নবী, জেবিবিএ’র কর্মকর্তা হাসান জিলানী, রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টর নুরুল আজিম সহ বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী উপস্থিত ছিলেন।
মসজিদে মেয়র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কোমা
ইউএসএনিউজঃ নিউইয়র্ক সিটির মেয়র প্রার্থী ও সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কোমো জ্যাকসন হাইটসে মসজিদে গিয়ে বক্তব্য রাখেন মুসল্লীদের উদ্দেশে। ৩ অক্টোবর শুক্রবার জুমার নামাজের প্রাক্কালে জ্যাকসন হাইটসের বাংলাদেশ স্ট্রিটে অবস্থিত দারুল হাদিয়া মসজিদে তাকে স্বাগত জানান ইমাম মুফতি সামাদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কমিউনিটি বোর্ড সদস্য বাংলাদেশী ব্যবসায়ী নেতা ফাহাদ সোলায়মান, ডেমোক্রেটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার ড. দিলীপ নাথ, ও বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সভাপতি এম আজিজ। আগামী ৪ নভেম্বরের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাবেক ডেমোক্রেটিক গভর্নও অ্যান্ড্রু কোমো।
উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক সিটি মেয়র নির্বাচনে সোশালিস্ট ডেমোক্রেটিক প্রার্থী অ্যাসেম্বলি সদস্য জোহরান মামদানির প্রতি সমর্থন তুলে নিয়েছেন কুইন্সের প্রভাবশালী বাংলাদেশী ব্যবসায়ী নেতা ফাহাদ সোলায়মান। এতদিন মামদানিকে সমর্থন করলেও তার ‘যৌনকর্ম বৈধকরণের’ নীতির প্রতি সমর্থনের কারণে এখন বিরোধিতা করছেন তিনি। মসজিদে ফাহাদ সোলায়মান এই ঘোষণা দেন।
ফাহাদ সোলায়মান বলেন, ‘যৌনকর্ম বৈধকরণ মানে মানব পাচারকে সমর্থন করা। সূর্য ডোবার পর রুজভেল্ট অ্যাভিনিউতে দেখা যায়—পুরো এলাকাই যৌনকর্মীদের দখলে।’
জনাব সোলায়মান জানান, তিনি এবার সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কোমোকে ভোট দেবেন। একইসঙ্গে এই মসজিদের সদস্যদেরও কোমোকে সমর্থনের আহ্বান জানান।
ইমাম কাজী কাইয়ুমও কোমোর প্রতি সমর্থন ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘আমি গর্বের সঙ্গে অ্যান্ড্রু কোমাকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে সমর্থন করছি। তিনি বিভাজন নয়, ঐক্যের রাজনীতি চান।
অ্যান্ড্রু কোমোও মসজিদে বক্তব্য দেন এবং মামদানির অবস্থানকে ‘নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য’ বলে মন্তব্য করেন।
নিজে ক্যাথলিক—খ্রিস্টান হলেও ২০১১ সালে গ্রাউন্ড জিরোর কাছে ‘পার্ক ৫১’ মসজিদ নির্মাণের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেন তিনি। হিজাব পরার কারণে আক্রান্ত এক মুসলিম নারী কর্মীর অধিকার রক্ষায়ও কাজ করেছিলেন। বক্তৃতায় কোমো বলেন, ‘নিউইয়র্ক তথা আমেরিকা ধর্মীয় সম্প্রীতির অনন্য তীর্থস্থান। সেই ঐতিহ্য অটুট রেখেই আমরা এগিয়ে যেতে চাই।’
কোমো আরও বলেন, ‘নিউইয়র্ক সিটিতে হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধরা সমান অধিকার নিয়ে বসবাস করছে। এই সহযোগিতার ধারা ব্যাহত হতে দেওয়া যাবে না।’
এ সময় ফাহাদ সোলায়মান ও এম আজিজ জনকল্যাণে পরীক্ষিত নেতৃত্ব হিসেবে কোমোর পক্ষে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান। ফাহাদ সোলায়মান বলেন, ‘জোহরান মামদানি চার বছর ধরে স্টেট অ্যাসেম্বলিম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও নিজেকে মুসলমান হিসেবে কখনো তুলে ধরেননি, কিংবা কোনো মসজিদে যাননি। এখন কেবল ভোটের জন্য কমিউনিটিকে কাছে টানার চেষ্টা করছেন।’
তিনি জ্যাকসন হাইটসের ট্রাফিক ও ব্যবসায়ীদের সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি চেয়ে বলেন, ‘আমরা বিপুল অংকের ট্যাক্স দিই, কিন্তু সিটির কাছ থেকে যথাযথ সুবিধা পাই না। আশা করি কোমো মেয়র হলে এই অবস্থার পরিবর্তন হবে।’
ডেমোক্রেটিক প্রার্থী নির্বাচনে মামদানির কাছে পরাজয়ের পর কোমো স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে নেমেছেন। সম্প্রতি মেয়র এরিক অ্যাডামসও প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন, ফলে এই সিদ্ধান্তের সুফল কোমো পেতে পারেন বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা।
তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রকাশ্য সমর্থন পাওয়ায় উদারপন্থী ও তরুণ ভোটারদের মধ্যে কোমোর প্রতি কিছুটা নেতিবাচক মনোভাব দেখা দিয়েছে।
গত সপ্তাহে জ্যামাইকায় বেদান্ত সোসাইটির পূজামন্ডপ পরিদর্শনে গিয়ে অ্যান্ড্রু কোমো ‘হিন্দুজ ফর কোমো’ শ্লোগানে অভ্যর্থনা পান।