এ বছর যারা নোবেল পেলেন

. জীবন বিশ্বাসঃ নোবেল পুরস্কার ঘোষণার ঐতিহ্য অনুসরণ করে প্রতিবছরের মতো এবছরও অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার অক্টোবর থেকে নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা শুরু হয়েছে। সুইডেন এবং নরওয়ে থেকে প্রতি বছর ধারাবাহিকভাবে চিকিৎসা, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, সাহিত্য, শান্তি সহ সবশেষে অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়। বছর অক্টোবর সোমবার চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল বিজয়ীর নাম ঘোষণার মাধ্যমে এই বহুল প্রতীক্ষিত ঘোষণার শুরু হয় এবং তা শেষ হবে ১৩ অক্টোবর সোমবার অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী বা বিজয়ীদের নাম ঘোষণার মাধ্যমে। অর্থাৎ প্রতিবছর অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার থেকে শুরু করে দ্বিতীয় সোমবারের মধ্যে মোট দিনে ৬টি বিষয়ের ওপর নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। চিকিৎসা, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, সাহিত্য অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী বা বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয় সুইডেনের দি রয়াল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস  থেকে এবং শান্তিতে নোবেল বিজয়ী বা বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয় নরওয়ের দি নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি থেকে। অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার বলতে বিশ্ববাসী যা জানে তা কিন্তু নোবেল পুরস্কার নয়, আলফ্রেড নোবেলের সম্মানার্থে ১৯৬৯ সালে সুইডেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এটি প্রবর্তন করে। সুইডিশ ভাষায় সুইডেনের উচ্চারণ হচ্ছেএস্ভেরিয়ে’ (Sveriges), তাই এই পুরস্কারকে বলা হয়এস্ভেরিয়ে রিক্সব্যাংক প্রাইজ ইন ইকোনমিক সাইন্সেস ইন মেমোরি অফ আলফ্রেড নোবেল’ (The Sveriges Riksbank Prize in Economic Sciences in Memory of Alfred Nobel) সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য নোবেল প্রাইজের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট www.nobelprize.org থেকে জেনে নেয়া যেতে পারে। তবে অর্থনীতিতে এই পুরস্কারের গুরুত্ব নোবেল পুরস্কারের চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়।

রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অক্টোবর ২০২৫ সালের ছয়টি নোবেল পুরস্কারের মধ্যে চারটির ঘোষণা সম্পন্ন হয়েছে। পুরস্কারগুলো হচ্ছে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, শারীরবিদ্যা বা চিকিৎসাবিজ্ঞান, এবং সাহিত্য। নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের নাম এবং নোবেল প্রাপ্তির মূল গবেষণার বিষয় সংক্ষেপে তুলে ধরা হল। বর্তমানে নোবেল পুরস্কারের আর্থিক মূল্য প্রায় ১১ লক্ষ (. মিলিয়ন) ডলার। উল্লেখ্য, শুক্রবার ১০ অক্টোবর নরওয়ে থেকে শান্তিতে এবং সোমবার ১৩ অক্টোবর সুইডেন থেকে অর্থনীতিতেএস্ভেরিয়ে রিক্সব্যাংক প্রাইজবিজয়ী বা বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করবে।

চিকিৎসাশাস্ত্রঃ মেরি . ব্রাঙ্কো (আমেরিকা), ফ্রেড জে. ্যামসডেল (আমেরিকা) এবং শিমোন সাকাগুচি (জাপান)

দি রয়াল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস অক্টোবর সোমবার চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করে। মেরি ব্রুনকো এবং ফ্রেড ্যামসডেল, দুজনই আমেরিকার বিজ্ঞানী।পেরিফেরাল ইমিউন টলারেন্সসংক্রান্ত অগ্রণী আবিষ্কার’—এর জন্য তাঁরা সম্মানে ভূষিত হলেন। আবিষ্কারের কেন্দ্রে রয়েছে নিয়ন্ত্রক টিকোষ (ঞৎবম) ঋঙঢচ৩ জিন। নোবেল পুরস্কারের আগে থেকেই সূত্রে অনুপ্রাণিত হয়ে বিশ্বব্যাপী দুই শতাধিক ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে যা স্বয়ংক্রিয় রোগ, প্রতিস্থাপন, ক্যান্সার চিকিৎসায় টিরেগ নিয়ন্ত্রণে বিশাল ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করা হয়। মেরি . ব্রাঙ্কো (জন্ম ১৯৬১) শিল্পগবেষণায় কাজ করতে গিয়ে স্কার্ফি মাউসএর জিনগত ত্রুটি ঋঙঢচ৩ চিহ্নিত করেন। তিনি সিয়াটলের ইনস্টিটিউট ফর সিস্টেমস বায়োলজিতে সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত। ফ্রেড জে. ্যামসডেল (জন্ম ১৯৬০) মানব ওচঊঢ রোগে ঋঙঢচ৩এর মিউটেশন দেখিয়ে ইমিউন টলারেন্সএর ভিত্তি উন্মোচন করেন। তিনি বর্তমানে সোনোমা বায়োথেরাপিউটিক্স কর্মরত। শিমোন সাকাগুচি (জন্ম ১৯৫১) ঈউ২৫নিয়ন্ত্রক টিকোষের অস্তিত্ব ভূমিকা নির্ধারণে পথিকৃত হিসেবে স্বীকৃত। তিনি ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। 

পদার্থবিজ্ঞানঃ জন ক্লার্ক (আমেরিকা), মিশেল এইচ. ডেবোরে (ফ্রান্স) এবং জন এম. মার্টিনিস (আমেরিকা)

দি রয়াল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস অক্টোবর মঙ্গলবার পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করে। জন ক্লার্ক, মিশেল এইচ. দেবোরে এবং জন এম. মার্টিনিস যৌথভাবে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।একটি বৈদ্যুতিক বর্তনীতে ম্যাক্রোস্কোপিক কোয়ান্টাম টানেলিং শক্তিকোয়ান্টাইজেশন আবিষ্কার’—এর জন্য তাঁরা সম্মানে ভূষিত হন। ১৯৮৪৮৫ সালের সুপারকন্ডাক্টিং জোসেফসনজংশন পরীক্ষায় তাঁরা কিপস্কেলে (চিপে) কোয়ান্টাম ঘটনাকে দৃশ্যমান করে দেখানযা আধুনিক পরবর্তী প্রজন্মের তথ্যপ্রযুক্তির ভিত মজবুত করবে বলে ধারণা করা হয়। জন ক্লার্ক (জন্ম ১৯৪২, পিএইচডি কেমব্রিজ ১৯৬৮) বর্তমানে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলেতে কর্মরত। মিশেল এইচ. দেবোরে (জন্ম ১৯৫৩, পিএইচডি প্যারিসসুদ ১৯৮২) বর্তমানে ইয়েল ইউনিভার্সিটি ইউসি সান্তা বারবারাতে কর্মরত। জন এম. মার্টিনিস (জন্ম ১৯৫৮, পিএইচডি ইউসি বার্কলে ১৯৮৭) বর্তমানে ইউসি সান্তা বারবারাতে এবং কিউল্যাবএর সিটিও হিসেবে কর্মরত। 

রসায়নঃ সুসুমু কিতাগাওয়া (জাপান), রিচার্ড রবসন (ইংল্যান্ড) এবং ওমর এম. ইয়াগি (জর্ডান)

গত বছরের মতো বছরও তিনজন বিজ্ঞানী যৌথভাবে কেমিস্ট্রি বা রসায়নশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। দি রয়াল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস অক্টোবর বুধবার রসায়নশাস্ত্রে নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করে। যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন সুসুমু কিতাগাওয়া, রিচার্ড রবসন এবং ওমর এম. ইয়াগি।মেটালঅর্গানিক ফ্রেমওয়ার্কস (গঙঋং) উদ্ভাবন’—এর জন্য তাঁরা সম্মানে ভূষিত হন। বৃহৎ ছিদ্রসম্বলিত স্ফটিক কাঠামোতে গ্যাস রসায়নিক প্রবাহমানতা নিশ্চিত করে, যার প্রয়োগ মরুভূমির হাওয়া থেকে পানি আহরণ, ঈঙধরে রাখা, টক্সিক গ্যাস সংরক্ষণ, অনুঘটক ক্রিয়ায় দারুণ অগ্রগতি ঘটবে বলে ধারণা করা হয়। সুসুমু কিতাগাওয়া (. ১৯৫১, পিএইচডি কিয়োটো ১৯৭৯) বর্তমানে কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত। রিচার্ড রবসন (জন্ম ১৯৩৭, পিএইচডি অক্সফোর্ড ১৯৬২) বর্তমানে মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটিতে কর্মরত। ওমর এম. ইয়াগি (জন্ম ১৯৬৫, পিএইচডি ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয় ১৯৯০) বর্তমানে ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি, বার্কলেতে কর্মরত।  

সাহিত্যঃ লাসলো ক্রাসনাহোরকাই (হাঙ্গেরি)

বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন হাঙ্গেরির লেখক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই। দি রয়াল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস অক্টোবর বৃহস্পতিবার সাহিত্যে নোবেল বিজয়ীর নাম ঘোষণা করে। নোবেল কমিটির ভাষ্য অনুযায়ী, লাসলো ক্রাসনাহোরকাই সম্মানে ভূষিত হয়েছেন তাঁরধ্বংসস্তূপমুখী আতঙ্কের ভেতরেও শিল্পের শক্তিকে পুনর্নিশ্চিতকারী, দৃষ্টিমান পরম্পরাগত রচনার জন্য ১৯৫৪ সালের জানুয়ারি হাঙ্গেরির জিউলায় তাঁর জন্ম। দীর্ঘ কিন্তু শ্বাসরুদ্ধকর বাক্যপ্রবাহ অস্তিত্ববাদী পরিসরের জন্য তিনি প্রসিদ্ধ। ইমরে কের্তেস্ (২০০২)—এর পর তিনি দ্বিতীয় হাঙ্গেরিয়ান যিনি সাহিত্যে পুরস্কার পেলেন।

আগামী ১০ ডিসেম্বর অসলোতে আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকীতে বিজয়ীদেরকে নোবেল পুরস্কারের মেডেল অর্থ প্রদান করা হবে।

Related Posts