হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে অভিযোগ || অন্তর্বর্তী সরকার নতুন করে দমন—পীড়ন করছে

বিবিসি বাংলাঃ আন্তর্জাতিক এই মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, বাংলাদেশে কর্মরত জাতিসংঘের মানবাধিকার দলের নির্বিচারে আটক ব্যক্তিদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানানো উচিত। এছাড়া জাতিসংঘের ওই দলের উচিত হবে মানবাধিকার রক্ষা রাজনৈতিক সহিংসতায় জাড়িত ব্যক্তিদের বিচারের মুখোমুখি করার জন্য কর্তৃপক্ষকে উৎসাহিত করা।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, টানা তিন সপ্তাহ ধরে চলা বিক্ষোভে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ২০২৪ সালের অগাস্টে ক্ষমতা গ্রহণ করে অন্তর্বর্তী সরকার। সেই বিক্ষোভে নিহত হয় প্রায় এক হাজার ৪০০ মানুষ।

সংস্থাটির বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সংশোধিত সন্ত্রাসবিরোধী আইন ব্যবহার করে অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৫ সালের ১২ই মে আওয়ামী লীগকে সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ (কার্যক্রম) করে। দলটির সমর্থনে যেকোনো সভা, প্রকাশনা অনলাইনে দেওয়া বক্তব্য এই নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত। আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ শান্তিপূর্ণ কর্মীদের গ্রেফতারে আইনটি ব্যবহার করা হচ্ছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, “রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে কারাগারে পাঠানো হোক অথবা শান্তিপূর্ণ মতপ্রকাশে বাধা দেওয়া হোক, অন্তর্বর্তী সরকারের এমন কোনো পক্ষপাতমূলক আচরণ করা উচিত নয় যা শেখ হাসিনার সরকারের সময় বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে করা হয়েছে।

তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরকে বাংলাদেশে মানবাধিকার রক্ষায় সহায়তার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে। তাদের সার্বিক পরিস্থিতির ওপর নজরদারি করা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গ্রেফতারের ঘটনাগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে হস্তক্ষেপ করা উচিত।

অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে হাজার হাজার মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যাদের অনেকের বিরুদ্ধেই শুধু সন্দেহের ভিত্তিতে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে ইউম্যান রাইটস ওয়াচ।

সংস্থাটি আরও বলেছে, অসংখ্য মানুষকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আটক রাখা হয়েছে। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে বেশ কয়েকজন অভিযোগ করেছেন, চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত করাসহ পুলিশ হেফাজতে তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে। ধরনের অভিযোগ শেখ হাসিনার শাসনামলের কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে।

মঞ্চ ৭১এর আলোচনা সভা থেকে আটকের প্রসঙ্গ টেনেছে এইচআরডব্লিউ

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকায় একটি আলোচনা সভা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাংবাদিককে আটকের ঘটনাও তুলে ধরা হয়েছে।

তাতে বলা হয়েছে, গত ২৮শে আগস্টমঞ্চ ৭১নামের একটি সংগঠন আয়োজিত আলোচনা সভা থেকে সাংবাদিক শিক্ষাবিদসহ মোট ১৬ জনকে আটক করে পুলিশ। রাজধানীতে সাংবাদিকদের সংগঠন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) কার্যালয়ে প্রকাশ্যে ওই সভার আয়োজন করা হয়েছিল।

হঠাৎ একদল উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তি সেখানে গিয়ে সভায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের ঘিরে ফেলে এবং তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার শুরু করে। সভায় উপস্থিত ব্যক্তিরা আওয়ামী লীগের অনুগত বলেও অভিযোগ করে তারা।

এই ঘটনা তুলে ধরতে গিয়ে সংস্থাটির বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ওই আলোচনা সভায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্না। তিনি নিরাপত্তার জন্য পুলিশকে ফোন করেন। কিন্তু বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের গ্রেফতারের বদলে পুলিশ আলোচনা সভায় অংশ নেওয়া ১৬ জনকে আটক করে।

এর মধ্যে কয়েকজনের বয়স ছিল ৭০ থেকে ৮০ বছর। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান এবং সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, যিনি পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হন।

নিরাপত্তার জন্য তাদের আটক করা হয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে শুরুতে আটকদের পরিবার আইনজীবীদের জানানো হয়েছিল। কিন্তু পরে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়।

মানবাধিকার সংস্থাটি বলেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০০৯ সালে সন্ত্রাসবিরোধী আইন প্রণয়ন করা হয়। কর্মকর্তারা বলেছেন, ক্ষমতায় থাকাকালে এই আইনের অপব্যবহারের জন্য আওয়ামী লীগের সদস্যদের জবাবদিহির আওতায় আনতে ২০২৫ সালের সংশোধনী প্রয়োজন ছিল।

বাংলাদেশ সম্পাদক পরিষদ সতর্ক করেছে, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের সংশোধনগুলো মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করবে এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে সংকুচিত করবে, যা উদ্বেগজনক। এটি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। যদিও অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর কোনো ধরনের বিধিনিষেধ আরোপের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বলে এইচআরডব্লিউ উল্লেখ করেছে।

Related Posts