ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে মানবতা || ওয়াশিংটন পোস্টে প্রশ্ন, AI কি ধ্বংসের পথে নিয়ে যাবে?

বাঙালী প্রতিবেদনঃ ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর পলিটিক্যাল সাইন্সের প্রফেসর এরিক অলিভার গত বুধবার ওয়াশিংটন পোস্টে ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি আমাদের ধ্বংস করে দেবে?’ এমন প্রশ্নবোধক শিরোনামে একটি প্রতিবেদন লিখেছেন। তার শুরুতেই বলা হয়, আর্টিফিশিয়াল ইন্টলিজেন্স নিয়ে ভীতির কারণ কেবলমাত্র আমাদের চাকরি চলে যাওয়া, রাজনীতিকে ভঙ্গুর করা কিংবা আমাদের চিন্তাশক্তিকে দুর্বল করে দেয়ার জন্য নয়, তার চেয়েও ভয়াবহ প্রশ্নটি হলো, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি আমাদের ‘হিউম্যানিটি’ বা মানবিক বোধকে ধ্বংস করে দেবে?
ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, টেকনোলজি কোম্পানিগুলো যেভাবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে আরো ক্ষমতাশালী করে তোলার প্রতিযোগিতায় নেমেছে, তাতে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিজে নিজে শক্তিশালী হয়ে উঠবে এবং এমন এক স্বয়ংক্রিয় মেধার অধিকারী হবে যে তখন মানবকুলের ক্ষমতাকে অতিক্রম করে যাবে। ফলে বেঁচে থাকাই হুমকির মুখে পড়তে পারে। টেক ইন্ডাস্ট্রির কয়েকজন লিডার এই ধরনের ভয়াবহতার আশংকা করছেন ২৫%। তবে এই হিসাব অত্যন্ত রহস্যময়।
পোস্ট বলছে, ট্রুথ, ইন্ডাস্ট্রি হাইপ ও টেকনোফ্যান্টাসির মধ্যে পার্থব্য নির্ণয় চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ধরনের দাবি ডিস্টোপিয়ান এ্যাংজাইটির আশংকাকে সাইন্স ফিকশনে বর্ণিত অবাস্তব ও অসত্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় যা দেখা গেছে হ্যাল ৯০০০ থেকে টার্মিনেটরে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বিষয়ে যারা ভবিষ্যদ্বাণী করেন তারা মানুষের বুদ্ধিমত্তা বিষয়ে এতটই নিশ্চিত যে একে চ্যালেঞ্জ করার মত যেন কিছুই নেই। তাছাড়া আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স মানুষের ইন্টেলিজেন্সের বর্ধিত একটি রূপ। যেমন ডিজিটাল ফরম্যাট। সবই মানব মেধার অংশ। কোনোভাবেই এসব স্বয়ংসম্পূর্ণ বা সয়ম্ভু নয়। আর এ পর্যন্ত উদ্ভাবিত আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সম্পূর্ণভাবেই মানবসৃষ্ট ও জেনেরেট করা ড্যাটার সমষ্টি। মানুষের মেধাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উৎসমুখ। তবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সুপারইন্টেলিজেন্ট হয়ে ওঠার জন্য পরবতীর্তে ড্যাটা সংগ্রহে মানুষের মেধাকে অতিক্রম করে যেতে পারে। এ কারণেই বিজ্ঞানীদের এমনভাবে আটিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ডেভেলপ করতে হয়, যাতে তারা বাস্তবের সীমা ছাড়িয়ে না যায়। বর্তমানে এআই এর ভবিষ্যত নিয়ে যেসব ভাবনা ও আশংকা সম্পূর্ণ না হলেও অনেকটাই হাইপোথেটিকেল, কিংবা ট্রান্সথ্রপিক ইন্টেলিজেন্সÑ যার অনেক কিছুই মানবজ্ঞানের বাইরে।
ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, বর্তমানে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স যেভাবে অপারেট করা হচ্ছে তা এখনো পর্যন্ত মানুষের ভাষা ও কোডের মধ্যেই অবস্থান করছে। তবে যে কোনো ভাবেই হোক এআই যদি হিউম্যানিটি বা মানবতাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয় ভবিষ্যতে, তাহলে যা ঘটবে তা হলো, সেই মানবতাহীন মানুষ যে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে আরো বিস্তৃত করবে, তা হবে তারই প্রতিফলন। অর্থাৎ মানবতাহীন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স।
ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের জন্য প্রধান হুমকি এই এ্যাপ নিজে নয়, যে মানুষ এই প্রযুক্তিকে ডেভেলপ করবেন তিনি। যেমন এআইএর নিয়ন্ত্রক মানুষ যদি হেইটফুল ও ভায়োলেন্ট আউটপুট দেয় প্রোগ্রামিংএ তাহলে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সও ঘৃণা ও সংঘাতের কারখানা হয়ে উঠবে। তার পরিণতিই শেষ পর্যন্ত মানব সমাজকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাবে।
ওয়াশিংটন পোস্ট এবং প্রফেসর অলিভার এ বিষয়টি নিয়ে প্রযুক্তিবিদদের সতর্ক করে দিয়েছেন।