বাংলাদেশের তেতুলিয়ার অর্গানিক চা || আমেরিকায় জনপ্রিয় Teatulia

বাঙালী প্রতিবেদনঃ বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের তালিকায় দীর্ঘদিন ধরেই আছেচাএর নাম। সেই চা বিশেষ কোনো চা নয়। তবে বাংলাদেশের চায়ের সুঘ্রাণের নাম আছে। কিন্তু অর্গানিক চাএর কথা কে ভেবেছে? কিংবা এই চা বাংলাদেশের যে এলাকায় উৎপাদিত হয় সেই উত্তরের প্রায় শেষ প্রান্তের এলাকা তেঁতুলিয়ার নামটিকেও চায়ের নাম হিসাবে ব্যবহার করে তাকে বিশ্ববিখ্যাত করে তোলা যায় সেই কথাও নিশ্চয় আগে কেউ ভাবেনি। সবই উর্বর মস্তিষ্ক বা সৃজনশীল মগজের উদ্ভাবনা। তেঁতুলিয়ার নামের ইংরেজি বানান সামান্য পরিবর্তন করে অর্থাৎ কেবল একটি A যোগ করে তাকে করে তোলা হল Teatelua। আর এই নামেই বাজারজাত করা হচ্ছে আমেরিকায় অনেকটা আইসড টি মত। বিশ্ববিখ্যাত অর্থনীতি মার্কেট বিষয়ক ম্যাগাজিন ফোর্বসের হিসাবে পৃথিবীর ২৫টি চায়ের ব্র্যান্ডের মথ্যে অন্যতম বাংলাদেশের এই অর্গানিক চাটিটুলিয়াস্থান করে নিয়েছে।

ফোর্বসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছেঃ বিশ্বের সেরা ২৫টা চায়ের ব্র্যান্ডের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশের তেঁতুলিয়া অর্গানিক চা। 

তেঁতুলিয়া বাংলাদেশের অর্গানিক চায়ের রাজধানী। একসময় যা ছিল প্রান্তিক এক উপজেলা, আজ তাই অর্গানিক চা উৎপাদনের পথিকৃৎ হিসেবে বিশ্বে পরিচিত। ২০০০ সাল থেকে তেঁতুলিয়াতে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে, কোনো রকম রাসায়নিক সার বা কীটনাশক ছাড়াই চা চাষের এক বিপ্লব শুরু হয়, যা পঞ্চগড়ের অর্থনীতিতে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে।

কীভাবে তৈরি হয় এই অর্গানিক চা?

এখানে চা চাষ হয় প্রকৃতির নিজস্ব নিয়মে। গোবর এবং সবুজ লতাপাতা দিয়ে তৈরি হয় জৈব সার। আর পোকা দমনের জন্য নিম, নিশিন্দা, বিষকাঁটালির মতো ভেষজ পাতার মিশ্রণে তৈরি হয় প্রাকৃতিক কীটনাশক (বায়োপেস্টিসাইড) দুটি পাতা একটি কুঁড়িএই নিয়ম মেনে হাত দিয়ে তোলা হয় প্রতিটি পাতা, যা পরে কারখানায় প্রক্রিয়াজাত হয়ে বিশ্বমানের অর্গানিক চায়ে পরিণত হয়।

বিশ্বজুড়ে তেঁতুলিয়ার চায়ের খ্যাতি

‘A cup of happiness’ স্লোগানে তেঁতুলিয়ার নামেই (Teatulia Tea)এখানকার অর্গানিক চা আজ একটা বিশ্বস্বীকৃত প্রিমিয়াম ব্র্যান্ড। যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্যের মতো দেশের কঠোর মান নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এটা পেয়েছেঅর্গানিকসনদ। এমনকি ফোর্বস ম্যাগাজিনের করা বিশ্বের সেরা ২৫টা চায়ের ব্র্যান্ডের তালিকায়ও জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশের এই তেঁতুলিয়া অর্গানিক চা। বর্তমানে জার্মানি, জাপানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে এখানকার চা।

অর্গানিক চায়ের উপকারিতা

ওজন কমানো, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি, ডায়াবেটিস প্রতিরোধ, হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ এর রয়েছে অসংখ্য স্বাস্থ্যকর গুণ। ব্ল্যাক টি, গ্রিন টি ছাড়াও তুলসী, আদা, জেসমিন, পুদিনা পাতাসহ এখানে প্রায় ৭০৮০ প্রকারের ভেষজ চা তৈরি হয়।

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে শুরু হওয়া এই অর্গানিক চা চাষের আন্দোলন এখন ছড়িয়ে পড়েছে ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুরসহ উত্তরের আরও পাঁচটা জেলায়। তেঁতুলিয়া আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে, প্রকৃতির প্রতি সৎ থাকলে প্রকৃতিও আমাদের দুহাত ভরে ফিরিয়ে দেয়।

Related Posts