৮৩—তে অমিতাভ বচ্চন

৮৩ তম জন্মদিনে (১১ অক্টোবর) ভক্তদের উচ্ছ্বাস, সহকর্মীদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় ভাসলেন বলিউড শাহেনশাহ অমিতাভ বচ্চন। নিজের কারিশমায় ভারতীয় সিনেমায় অমিতাভ প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘বচ্চন যুগ’। তার ব্যারিটন আওয়াজকে এখনও টেক্কা দিতে পারেননি কেউই। ১৯৪২ সালের এই দিনে জন্মগ্রহন করা অমিতাভ বচ্চন এখন বলিউডের শাহেনশাহ হলেও,ক্যারিয়ারের শুরুটা মোটেই সহজ ছিল না তার। কলকাতা শহরে পা দিয়ে ছোটোখাটো চাকরি করতেন। রাশভারী আওয়াজের মালিক হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন রেডিওতেও। কিন্তু ব্যর্থ হন তিনি। অতিরিক্ত ভারী আওয়াজ হওয়ার কারণে বেতারে কাজ জোটেনি। ঠিক সেই সময়ে পরিচালক মৃণাল সেনের নজরে পড়েন। অমিতাভের আওয়াজকে মৃণাল সেন ব্যবহার করেন তার ছবি ‘ভুবন সোমে’।
সেই থেকেই সিনেমায় সূত্রধর হওয়া শুরু। তবে শুধু আওয়াজে নয়, দীঘল চেহারার অমিতাভ সিনেপর্দায় পা দেওয়া মাত্রই নতুন স্ট্রাগল শুরু। প্রথম ছবি ‘সাত হিন্দুস্থানি’। কেরিয়ারের গোড়ায় একাধিক ছবি ফ্লপ করে। ভাগ্য ফেরে ‘দিওয়ার’, ‘জঞ্জির’ থেকে। হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি পায় ‘অ্যাংরি ইয়ংম্যান’। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। অমিতাভ মানেই বক্স অফিস সুপারহিট। রীতিমতো ইতিহাস তৈরি করতে শুরু করেন বলিউডের ‘বিগ বি’। ‘মুকদ্দর কা সিকন্দর’, ‘শোলে’, ‘শরাবি’, ‘নমকহালাল’, ‘ইয়ারানা’, ‘মর্দ’, একের পর এক মাইলস্টোন ছবি।
বিগ বি’র স্মরণীয় যতো চরিত্র
পিঙ্ক (২০১৬)
“নো মিনস নো”— এই সংলাপটি আজও মানুষের মনে বাজে, আর তা সম্ভব হয়েছিল অমিতাভ বচ্চনের দৃঢ় অভিনয়ের কারণে। এক আইনজীবীর চরিত্রে তিনি যৌন হয়রানি ও সামাজিক ভণ্ডামির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের কণ্ঠ হয়ে ওঠেন। অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরী পরিচালিত এই ছবিতে তাপসী পান্নু, অঙ্গদ বেদি, কির্তি কুলহারি প্রমুখ সহ—অভিনেতা ছিলেন।
বাদলা (২০১৯)
সুজয় ঘোষ পরিচালিত এই থ্রিলার ছবিতে অমিতাভ বচ্চন একজন ধূর্ত আইনজীবীর ভূমিকায় অভিনয় করেন, যিনি সত্য উন্মোচনে বুদ্ধি ও যুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করেন। ‘বাদলা’ প্রমাণ করেছে, ৮০ পার করেও বিগ বি এখনো রহস্যঘন চরিত্রে দর্শকদের চমকে দিতে পারেন। তাপসী পান্নু ও অমৃতা সিংও ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায়।
পা (২০০৯)
এই ছবিতে দেখা যায় অভিনয়ের এক অনন্য দৃষ্টান্ত। যেখানে ছেলে অভিষেক বচ্চন অভিনয় করেছেন বাবার চরিত্রে, আর বাবা অমিতাভ বচ্চন হয়েছেন তাঁর ছেলে ‘অরো’। বিরল জেনেটিক রোগ প্রোজেরিয়ায় আক্রান্ত এক শিশুর জীবনের গল্প দর্শকদের চোখে জল এনে দেয়। আর. বাল্কি পরিচালিত এই সিনেমায় ছিলেন বিদ্যা বালান ও পারেশ রাওয়ালও।
ব্ল্্যাক (২০০৫)
সঞ্জয় লীলা বানসালী পরিচালিত এই ছবিতে অমিতাভ বচ্চন অভিনয় করেন এক কঠোর অথচ মমতাময় শিক্ষকের চরিত্রে, যিনি দৃষ্টি ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী এক তরুণীর (রানি মুখার্জী) জীবনে আলো জ্বালান। ছবিটি তাঁকে এনে দেয় অসংখ্য পুরস্কার ও প্রশংসা।
পিকু (২০১৫)
সুজিত সরকার পরিচালিত এই মজাদার পারিবারিক নাটকে অমিতাভ বচ্চন ছিলেন এক রাগী অথচ প্রিয় পিতা, যার হাস্যকর সংলাপ ও আবেগময় মুহূর্ত দর্শকদের মনে গভীর ছাপ ফেলেছিল। দীপিকা পাড়ুকোন ও ইরফান খানের সঙ্গে তাঁর রসায়ন ছবিটিকে করে তোলে অনন্য।
বয়স, সময়, চরিত্র— কোনো কিছুরই সীমায় বাঁধা পড়েননি অমিতাভ বচ্চন। তাই আজও তাঁর প্রতিটি সংলাপ, প্রতিটি দৃশ্য, প্রতিটি উপস্থিতি ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে এক একটি স্মরণীয় অধ্যায় হয়ে আছে।