নিউইয়র্ক সিটি মেয়র নির্বাচনে প্রথম বিতর্ক || তিন প্রার্থীর ত্রিমুখী আক্রমণ

বাঙালী প্রতিবেদনঃ বিকেল থেকেই ম্যানহ্যাটানের রেডিও সিটি মিউজিক হলের সামনে ৫০ স্ট্রিটে তিন মেয়র প্রার্থীর সমর্থকরা নিজ নিজ প্রার্থীর প্লাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে গেছেন। তারা সকলেই উচ্ছ্বসিত। সমর্থকরা তাদের প্রার্থীদের জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। মূল নির্বাচনে জয়ের আগে তারা চান বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার প্রথম মেয়র ডিবেটে যেন তাদের প্রার্থী জয়ী হন। জোহরান মামদানি, এ্যান্ড্রু কোমো এবং কার্টিস স্লিওয়ার সমর্থকদের মধ্যে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশীও ছিলেন। তিন প্রার্থী এনবিসি টিভি স্টেশনে অর্থাৎ থার্টি রকে প্রবেশের আগে সমর্থকদের সাথে হ্যান্ডশেক করলেন। হ্যাঁ, আগামী নভেম্বর নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনের আগে এটাই ছিল প্রথম টিভি ডিবেট। এবারের অত্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ মেয়র নির্বাচন আমেরিকার দেশজুড়ে মানুষের মনোযোগ কেড়েছে দুই জনের কারণে। একজন প্রথম মেয়াদের এসেম্বলিম্যান, ৩৩ বছর বয়সী তরুণ, ইমিগ্রান্ট, মুসলিম বংশোদ্ভুত এবং সোশালিস্ট ডেমোক্রেট, জোহরান মামদানি। অপরজন ৬৮ বছর বয়সী, সাবেক ক্লিনটন প্রশাসনের হাড সেক্রেটারি, নিউইয়র্ক স্টেটের দুই মেয়াদেরও কিছুটা বেশি সময়ের গভর্নর, নিউইয়র্ক স্টেটের তিন মেয়াদের গভর্নর মারিও কোমোর পুত্র ডেমোক্রেট এ্যান্ড্রু কোমো। তবে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাঠে ইনডিপেনডেন্ট প্রার্থী। তৃতীয়জন রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী তার নিজস্ব সংগঠন গার্ডিয়ান এ্যানজেল এর প্রতিষ্ঠাতা কার্টিস স্লিওয়া।

মঞ্চে বামে ছিলেন এ্যান্ড্রু কোমো, মাঝে কার্টিস স্লিওয়া এবং ডানে জোহরান মামদানি। ডিবেট শেষে জোহরান মামদানির ক্যাম্পেইন অফিস থেকে পাঠানো ফক্স নিউজের সর্বশেষ জরিপের বরাত দিয়ে জানানো হয় মেয়র প্রার্থী জোহরান মামদানি ২৪ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন। ডিবেট শেষে ডেইলি নিউজ এবং এনবিসি নিউজ এটিকে একটি আক্রমণাত্মক ডিবেট বলে উল্লেখ করে। ডিবেট শুরু হয় একটি চমৎকার প্রশ্ন দিয়ে। প্রশ্ন করা হয়, মেয়র হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পরে ২০২৭ সালের জানুয়ারি সংবাদপত্রে তার সম্পর্কে কী হেডলাইন হতে পারে। এ্যান্ড্রু কোমো বলেন, যা যা প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছিলাম তার প্রায় সবক্ষেত্রেই এক বছরে এগিয়ে গেছি। জোহরান মামদানি বলেন, ট্রাম্পের বিরোধিতা সত্ত্বেও একটি এ্যাফোর্ডেবল সিটি নির্মাণে অগ্রগতির এক বছর।

এই ডিবেটের রিপোর্ট প্রকাশিত হয় নিউইয়র্কসহ আমেরিকার প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ সংবাদমাধ্যমে। নিউইয়র্ক টাইমস এই ডিবেটকে তীব্র, আক্রমণাত্মক পলিটিক্যাল ইস্যুতে মাইনফিল্ড বলে উল্লেখ করেছে। এ্যান্ড্রু কোমো এবং জোহরান মামদানি দুজনেই ছিলেন প্রচন্ড স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক। তাদের প্রশ্নে যেমন এসেছে নিউইয়র্ক সিটির নিরাপত্তা, এ্যাফোর্ডেবিলিটি, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে সম্পর্ক, এ্যান্ড্রু কোমোর কোভিডকালীন নার্সিং হোম নারী বিষয়ক অভিযোগ, ফেডারেল মামলা, পদত্যাগ, তেমনই এসেছে জোহরান মামদানির বাম ঘেষা রাজনীতি, পুলিশকে সংকুচিত করার প্রবণতা, এবং সর্বোপরি প্যালেস্টাইন/হামাস বিষয়ক প্রসঙ্গ।

এ্যান্ড্রু অভিযোগ করেন মামদানি মুসলিম ইস্যুকে সামনে এনে রাজনীতি করছেন, জোহরান বলেন তারা এই সিটি স্টেটের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেও তিনি গভর্নর থাকাকালে একবারও কোনো মসজিদ ভিজিট করেননি।

প্রশ্নের উত্তরে জোহরান মামদানি জানান তিনি শখের বশে মারিউয়ানা পান করেছেন। স্লিওয়া বলেন, মেডিকেল কারণে তিনি মারিউয়ানা নিয়েছেন। আগামী বছর ক্যাথি হকুলের পুনর্নির্বাচনে তারা এনডোর্স করবেন কিনা প্রশ্ন করা হলে কেউ হাত তোলেননি। 

স্লিওয়া বলেন, আমার ডানে আর্কিটেক্ট (কোমো) আর বামে শিক্ষানবীশ (মামদানি) কোমো বলেন, আমি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। অভিজ্ঞতার দাম অস্বীকার করা যাবে না। আমি জেএফকে, লাগোয়ার্ডিয়া এয়ারপোর্টকে বিশ্বের সেরা এয়ারপোর্ট করেছি। আমি ম্যানেজার। মামদানি প্রথম মেয়াদের এসেম্বলিম্যান।

শুরু থেকেই জোহরান মামদানি এ্যান্ড্রু কোমোকে তার নারীঘটিত কোভিডকালীন নার্সিংহোমে মৃত্যুর তথ্য গোপন করার প্রসঙ্গ কয়েকবার উত্থাপন করে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে চেষ্টা করেন। এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে এ্যান্ড্রুকে সামান্য নার্ভাস দেখাচ্ছিল। আর পুলিশ বাাহিনী সংকুচিত করা হামাস বিষয়ক প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সময় মামদানিকে কিছুটা নার্ভাস দেখাচ্ছিল।

দুই প্রার্থীই নিজ নিজ এজেন্ডা তুলে ধরেন। নিউইয়র্ক সিটির স্কুলের নিয়ন্ত্রণ, ৩১১ ফোন সিস্টেম, হেলথ মেন্টাল হেলথ বিষয়ে তাদের এজেন্ডা তুলে ধরেন।

কার্টিস স্লিওয়াকে বেশি সময় না দেওয়ায় তিনি তাকে কোনঠাসা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। তিনি মামদানির বাস, গ্রোসারি ইত্যাদি পরিষেবা বিনামূল্যে দেয়ার সমালোচনা করতে গিয়ে বলেন, ‘ইট ফ্যান্টাসি

প্রশ্নের উত্তরে কোমো জানান, তিনি যে বাড়িতে থাকেন তার মাসিক ভাড়া ,৮০০ ডলার, স্লিওয়া জানান ,৮০০ ডলার আর মামদানি জানান ,৩০০ ডলার। স্লিওয়া জানান তিনি সবসময় সাবওয়েতে চলাফেরা করেন।

গভর্নর কোমো বলেন, মামদানি জিতলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিউইয়র্ক সিটিকে ফেডারেল আওতায় এনে তিনি নিজে মেয়র হবেন। কবে শেষ কথা হয়েছে প্রসঙ্গে তিনি জানান, দীর্ঘদিন আগে তার সাথে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সর্বশেষ কথা হয়েছে। মামদানি বলেন তার সাথে কোনোদিন কথাই হয়নি।

এই ডিবেটে জয় পরাজয়ের চেয়েও বড় তাদের পারস্পরিক আক্রমণ। পারস্পরিক আক্রমণ হলেও কখনোই ন্যাস্টি ছিল না। তারা রাজনৈতিকভাবেই ডিবেটে পরস্পরকে মোকাবেলা করেছেন। তবে জোহরান মামদানি ছিলেন হাস্যোজ্জ্বল, ক্ষিপ্র এবং ইমপ্রেসিভ।

Related Posts