আশির আলোয় রেখা আহমেদ || এজাজ আলম নিউইয়র্ক

আজ তিনি ৮০ পূর্ণ করছেনমঞ্চের সেই অভিনেত্রীযিনি জীবনের অনেক আলোছায়ার মধ্যে দিয়ে থিয়েটারকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। বয়সের ভার তার কাঁধে, কিন্তু চোখে সেই অদ্ভুত দীপ্তি এখনো আছে, যা একসময় চরিত্রকে প্রাণ দিয়ে জীবন্ত করে তুলতো দর্শকের সামনে।  

আমি যখন তাঁর সঙ্গে কাজ শুরু করি, প্রথমে মনে হতো, তিনি শুধু একজন গম্ভীর সহকর্মী। কিন্তু দিনের পর দিন, রিহার্সালের ফাঁকফোকরে ধীরে ধীরে সম্পর্কটা অন্য রূপ নিলশ্রদ্ধা থেকে স্নেহ, সহকর্মী থেকে মাছেলের মতো নিঃশব্দ বন্ধনে। মঞ্চে তাঁর কঠোর নিয়মানুবর্তিতা, নীরব চোখের ভাষা, ছোট ছোট খোঁচাসবই আজ আমার এবং আমাদের থিয়েটার দল  ঢাকা ড্রামার সকলের কাছে শিক্ষণীয়। 

সংলাপ মুখস্থ করো না, চরিত্রের সঙ্গে মিশে যাও। অভিনয় মানে নিজের রক্তের মধ্যে বহমান সত্য।তাকে  নিয়ে ভাবতে বসে একদিন মহড়ায় তার বলা এইরকম করে বলা কথাটি  খুব করে মনে পড়লো, যা ব্যক্তিগতভাবে আমাকে অভিনয় করার ক্ষেত্রে এবং বাস্তব জীবনে মানুষের সঙ্গে মানুষের  সম্পর্ককেও বোঝাতে শিখিয়েছে  

অনেক তারকা অভিনেতা অভিনেত্রী এই শহরে বাস করেন যারা মাঝেমধ্যে তাদের পছন্দ অনুযায়ী থিয়েটার বা নাটকে কাজ করে থাকেন। কিন্তু ৮০তে পা রাখা এই অভিনেত্রী যেদিন এই শহরে পা রাখলেন আজ থেকে প্রায় ২৫ বছর আগে, সেদিন থেকেই নিয়মিত কাজ করে চলেছেন কোনো বিরতি ছাড়াই। বার্ধক্য, শারীরিক অক্ষমতা, রোগ শোক কোনোকিছুই আটকে রাখতে পারেনি তার থিয়েটার আর নাটকের প্রতি কমিটমেন্ট থেকে। যার সর্বশেষ প্রমাণ হিসেবে আমরা তাকে দেখতে পাই শিল্পাঙ্গন নাট্যমেলা ২০২৫, ঢাকা ড্রামার নতুন প্রযোজনাআন্ডাতে  বিচারকের ভূমিকায় অভিনয় করতে। এই শহরেঝলকদেখিয়ে মাঝে মাঝেনাটকমঞ্চস্থ হয়কিন্তু থিয়েটার চর্চা যাদের  নিরলস পরিশ্রমে এই শহরে টিকে রয়েছে তার মধ্যে তিনি অনুকরণীয়ভাবে উল্লেখযোগ্য। 

আজ ৮০তে পা দিলেও, মঞ্চের প্রতি তাঁর নিবেদন, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, আমাদের  অনুপ্রেরণার উৎস। তার প্রতিটি নতুন অভিনয়, প্রতিটি সংলাপ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়থিয়েটার কেবল নাটক নয়; এটি জীবনের প্রতিফলন। আর তিনি, সেই মঞ্চের  মধ্যমনি, যিনি  বেঁচে আছেন মঞ্চের  আলোতে, প্রতিটি সংলাপে আর  অভিনয়ের মধ্য দিয়ে।

আমার সেইতিনিশ্রদ্ধেয় রেখা আহমেদ। 

লেটার মার্কের জন্য অভিবাদন!

শুভ জন্মদিন আপনাকে!


Related Posts