রেখা আপার কাছে হেরে গেছি || প্রতিমা সুমী নিউইয়র্ক

২০২০, নভেম্বর মাস। প্যান্ডামিক চলছে। এক বিকেলে, বাইরে স্নো পড়ছে। বসে ভাবছি, কি করা যায়। ঠিক তখনি ফোন বেজে উঠল। ফোন রিসিভ করতেই অন্য প্রান্ত থেকে রেখা আপা বললেন তুই তাড়াতাড়ি আমার বাসাতে চলে আয়। আমার শরীরটা ভালো না। আমি সাথে সাথেই তাড়াহুড়ো করে স্নোর মধ্যে গাড়ি নিয়ে রওনা হলাম রেখা আপার বাড়ির উদ্দেশে। গিয়ে দেখি রেখা আপা মঞ্জু ভাই বেডরুমে বসে আছেন। আমাকে দেখেই বললেন কাছে আয়। আমি তার কাছে গিয়ে হাগ করলাম, হঠাৎ লক্ষ্য করলাম তিনি আমাকে একটা চেইন পরিয়ে দিয়েছেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম কী করছেন? রেখা আপা বললেন, এখন থেকে এটা তোর। আমি পুরোপুরি স্তম্ভিত। অসুস্থতার কথা বলে ডেকে এনে এমন একটা কাজ যে তিনি করতে পারেন, সেটা আমার কল্পনারও বাইরে। আমি সাথে সাথে গলা থেকে চেইন খুলে ফেললাম এবং বললাম এই চেইন আমি কিছুতেই নিতে পারবো না। এটা যদি আপনি কাউকে দিতে চান তাহলে, শাওনকে (রেখা আপার কন্যা) দেন। এটা ওর প্রাপ্য, আমি না। আমি এটা নিতে পারবো না। কিন্তু রেখা আপা আমার কথা শুনতে নারাজ। তখন মঞ্জু ভাইকে অনুরোধ করলাম, প্লিজ আপনি রেখা আপাকে একটু বুঝিয়ে বলবেন আমার পক্ষে এটা নেয়া সম্ভব না। মঞ্জু ভাই বললেন, আপনার রেখা আপা আমার সাথে কথা বলেই আপনাকে এই চেইনটা দিয়েছে এবং এটা আপনার প্রাপ্য। অসহায়ের মতো আমি আবারও রেখা আপাকে অনুরোধ করলাম চেইনটা ফিরিয়ে নেয়ার জন্য। কিন্তু তিনি কোনো কথা শুনতে নারাজ। অবশেষে বললাম ঠিক আছে, এই চেইন আমার, কিন্তু এটা আপনার কাছে থাক যতদিন আপনি বেঁচে আছেন। আপনি যখন থাকবেন না তখন আমি নিজে এসে নিয়ে যাবো। রেখা আপা বললেন, এত কথা বলিস না। এই চেইনটা আমি আমাদের ঢাকার বাড়ি বিক্রি করার টাকা থেকে আমার জন্যে কিনেছিলাম। এটা আমার। আর এখন আমি ঠিক করেছি এটা আমি তোকে দেবো। তুই আর একটা কথাও বলবি না, তুই এটা পরে থাকবি। এর পরেও যদি কিছু বলিস তাহলে তোর সাথে আর কোনো সম্পর্ক নেই। স্তম্ভিত হয়ে বসে রইলাম। আর ভাবছিলাম এটা কি করে সম্ভব? যার নিজের তেমন কোন স্বর্ণালঙ্কার নেই, সে কি করে তার একমাত্র স্বর্ণের চেইনটা অন্য কাউকে দিয়ে দিতে পারে? যার সাথে তার কোনো রক্তের সম্পর্ক নেই। প্রতিনিয়ত আমি হেরে যাই, ভালোবাসার কাছে রেখা আপার কাছে। শুভ জন্মদিন রেখা আপা।

Related Posts