বিবিসি বাংলার বিশ্লেষণ || সেনা কর্মকর্তাদের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে নানা প্রশ্ন

বিবিসি বাংলাঃ সেনা হেফাজতে থাকা অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের পরবর্তী বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে নানা প্রশ্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ দেশে আলোচিত হচ্ছে।
গত শনিবার সেনাবাহিনীর অ্যাডজুটান্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মো.হাকিমুজ্জামান সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, কেউ চার্জশিটভুক্ত আসামি হলেই সে অপরাধী হিসেবে প্রমাণিত নয়।
যে কারণে বিচার চলাকালীন সময়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তারা সেনাবাহিনীর ‘হেফাজতে’ থাকবে নাকি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে সেটিও স্পষ্ট করে বলেনি সেনাবাহিনী।
তবে ক্যান্টনমেন্টের একটি ভবন কারাগার হিসেবে ঘোষণা করায় সেখানেই ওই কর্মকর্তাদের রাখা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ট্রাইব্যুনাল বলছে, আইন অনুযায়ী কারো বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হলে তাকে পুলিশের মাধ্যমেই ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হবে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামীম বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের বিচার ট্রাইব্যুনালের আইন অনুযায়ী হবে। বিচার চলাকালীন তাদের আদালতে হাজির হতে হবে।’
যদিও এরই মধ্যে অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের বিচার নিয়ে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আইনজীবীরা বলছেন, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের বিচার নিয়ে যদি কোনও সংকট তৈরি হয় তাহলে সেনাবাহিনীর লিগ্যাল টিমের সাথে আলোচনার মাধ্যমে পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে ট্রাইব্যুনাল।
সিনিয়র আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে তারা অভিযুক্ত হয়েছে। প্রাথমিক তদন্ত করে অভিযোগ যখন সঠিক মনে হয় তখন তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়, অভিযোগপত্র দেওয়া মানে তাদের বিরুদ্ধে বিচার শুরু হতে পারে।’
এই আইনজীবী বলছেন, প্রাথমিকভাবে চার্জশিটভুক্ত হওয়ার পর নিয়ম অনুযায়ী তাদের চাকুরীতে থাকার সুযোগ নাই। যদি চূড়ান্তভাবে খালাস পান তখন তারা চাকরিসহ ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন।
গত ৮ অক্টোবর ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুম করে নির্যাতনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ২৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়।
এরপরই শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ১৫ জন কর্মরত সেনা কর্মকর্তাকে হেফাজতে নেওয়ার কথা জানায় সেনাবাহিনী।
ওইদিন আর্মি অফিসার্স মেসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর অ্যাডজুটান্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মো.হাকিমুজ্জামান জানিয়েছিলেন, দুটি মামলার ৩০ জন আসামির মধ্যে ২৫ জনই সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে নয় জন অবসরপ্রাপ্ত, একজন এলপিআরে গেছেন এবং বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ১৫ জন।
ওই সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আইনি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সেনা কর্মকর্তাদের হেফাজতে রাখা হয়েছে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযুক্তদের পরবর্তী বিচার প্রক্রিয়া কী?
গত ৮ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর আগামী ২২ অক্টোবরের মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
সোমবার সেনানিবাসের একটি ভবনকে অস্থায়ী কারাগার ঘোষণার পর ধারণা করা হচ্ছে সেখানেই রাখা হতে পারে হেফাজতে নেওয়া সেনা কর্মকর্তাদের।
এরপরই তাদের পরবর্তী বিচার প্রক্রিয়া কিভাবে হবে সেটি নিয়েও প্রশ্ন দেখা যাচ্ছে। এই প্রশ্নে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বলছে— অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিচার করা হবে ট্রাইব্যুনালের আইনেই।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামীম বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘পরবর্তী প্রক্রিয়া হবে যেভাবেই হোক অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের ট্রাইব্যুনালের সামনে আসতে হবে। এরপর তাদেরকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার পর তাদেরকে ট্রাইব্যুনাল জেলখানায় পাঠাবে। তারা জামিনও চাইতে পারে, ট্রাইব্যুনাল চাইলে তাদের জামিনও দিতে পারে।’
ট্রাইব্যুনাল বলছে, পরবর্তীতে ওই কর্মকর্তাদের অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি হবে। অভিযোগ গঠন করা হলে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থাপন করা হবে। সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থাপনের পর এ নিয়ে যুক্তি তর্ক উপস্থাপন করা হবে, পরবর্তীতে এই মামলার রায় ঘোষণা করা হবে।
প্রশ্ন ছিল, বিচার চলাকালে যদি আসামিরা আদালতে হাজির না হয়, কিংবা কেউ যদি পলাতক অবস্থায় থাকে তাহলে তাদের বিচার কোন প্রক্রিয়ায় হবে?
এমন প্রশ্নে প্রসিকিউটর মি. তামীম বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘যদি তারা (গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়া কর্মকর্তারা) ট্রাইব্যুনালে হাজির না হয় অথবা তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব না হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে।’
প্রসিকিউশন জানিয়েছে, যদি তাদের খুঁজে না পাওয়া যায় কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের গ্রেফতার না করতে পারে তখন এ নিয়ে রিপোর্ট প্রদান করতে হবে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীকে।
নিখোঁজ কর্মকর্তার বিচার কীভাবে?
গত শনিবারের সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর অ্যাডজুটান্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মো.হাকিমুজ্জামান জানিয়েছিলেন, গত ৮ অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং টিভি স্ক্রল বা গণমাধ্যম থেকে জানার পরপর সেদিনই এলপিআরের একজনসহ ১৬ জন কর্মকর্তাকে সেনা হেফাজতে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়।
এই সেনা কর্মকর্তা জানান, ওই ১৬ জন কর্মকর্তার মধ্যে মেজর জেনারেল কবির আহাম্মদ বাদে বাকিদের সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সেনা কর্মকর্তা কবির আহম্মদ যেন দেশের বাইরে যেতে না পারে সেজন্য দেশের সকল স্থল, সমুদ্র ও বিমানবন্দরগুলোতে জানানো হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বলছে, আইসিটি আইন অনুযায়ী কেউ যদি অনুপস্থিত থাকে তাহলে তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচার কাজ চলবে।