স্রোতের বিপরীতে এক শিল্পযাত্রা || সারওয়ার হারুন নিউজার্সি

আমার জন্মের অনেক আগেই রেখা আপা অভিনয় জগতে প্রবেশ করেছেন। আমি যখন ধীরে ধীরে চারপাশের জগৎ বুঝতে শুরু করি, তখন দেখেছিনারী চরিত্রে অভিনয় করছেন পুরুষ অভিনেতারা। কারণ, তখনও সমাজ মেয়েদের অভিনয়ে অংশগ্রহণ সহজভাবে নিতে পারেনি। তবু কিছু সাহসী নারী সেই কঠিন সময়ে সমাজের চোখ রাঙানি বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করে অভিনয়কে আপন করে নিয়েছিলেন। তাঁদেরই একজন হলেন রেখা আপারেখা আহমেদ।

তিনি ছিলেন সেইসব নারীদের মধ্যে একজন, যিনি স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে লড়েছেন নিজের অবস্থান তৈরির জন্য। অভিনয়কে তিনি পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন এমন এক সময়, যখন নারীর পেশাদার শিল্পী হয়ে ওঠা একপ্রকার বিদ্রোহের নামান্তর। এই লড়াইয়ের প্রতিটি ধাপের সাক্ষী রেখা আপা নিজেযার অনেকটাই হয়তো আমাদের অজানা থেকে গেছে।

বাংলাদেশে দুএকটি টেলিভিশন প্রযোজনায় তাঁর সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হলেও, তেমন ঘনিষ্ঠতা তখন হয়ে ওঠেনি। কিন্তু নিউইয়র্কে আসার পর যখন তাঁর সঙ্গে ঢাকা ড্রামার পরিচয় ঘটে, তখন তিনি নিজেই এগিয়ে এসে আমাদের নাট্যচর্চায় যুক্ত হতে চাইলেন। সেই থেকে তিনি শুধু দলের সদস্য ননতিনি আমাদেরআপা’, সবচেয়ে সিনিয়র, আবার কখনো স্নেহময় অভিভাবক।

উৎসবঅনুষ্ঠানে তিনি নিজ হাতে নানারকম খাবার তৈরি করে দলের সবাইকে আমন্ত্রণ জানান। কেউ উপেক্ষা করলে বা সাড়া না দিলে অভিমান করেন ছোট্ট মেয়েদের মতো, আবার ফোন করে নিজের অভিমান প্রকাশ করেন সবার সঙ্গে। এমন আন্তরিকতা আজকাল খুব বেশি দেখা যায় না।

অভিনয় যেন তাঁর ধমনীতে প্রবাহিত। শরীর ক্লান্ত হলেও মনের আগুন নেভেনি। দলের প্রতিটি প্রযোজনায় তিনি থাকতে চান, অংশ নিতে চান। এমনকি সাম্প্রতিক একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য নাটকে তাঁর জন্য আলাদাভাবে চরিত্র রচনা করা হয়েছিলশুধু তাঁর অভিনয়কে মঞ্চে ধরে রাখার জন্য।

আজ তাঁর ৮০তম জন্মদিনে, আমরা সাধুবাদ জানাই তাঁর থিয়েটারের প্রতি নিরলস প্রয়াস, নিষ্ঠা আর ভালবাসার জন্য। অভিনয়ের জন্য তাঁর ভালোবাসা যেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত জ্বলে থাকে, এই শুভকামনাই করি। আর কুর্নিশ জানাই নারী অভিনয় শিল্পী হিসেবে তাঁর লড়াইয়ের জন্য। 

শুভ জন্মদিন, রেখা আপা।

Related Posts