আমাদের ছোটবু রেখা আহমেদ || শফিউল আলম নিউইয়র্ক

আমাকে বলা হয়েছে আমার মেজো বোন রেখা আহমেদের ৮০তম জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে কিছু লিখতে। লেখার হাত আমার ভালো না। তবুও লিখতে হবে। ৮০তম জন্ম বার্ষিকী বলে কথা।
আমাদের ৭ ভাইবোনের মধ্যে ছোটবু (আমি ছোটবু বলে ডাকি) তৃতীয়। আমার থেকে পাঁচ বছরের বড়। জ্ঞান হওয়ার পর থেকে দেখছি তার স্বাধীনচেতা মনোভাব। শিল্প সংস্কৃতির সাথে তিনি কৈশোর থেকেই যুক্ত। স্কুলে পড়াশোনার পাশাপাশি নাটক, আবৃত্তি নিয়ে তার ব্যস্ততা। স্কুলের মঞ্চে তার অভিনয় প্রশংসা কুড়াচ্ছে। পিছিয়ে ছিল না সে তার রাজনৈতিক মনোভাব ব্যক্ত করতেও। দেখেছি ষাটের দশকে স্বৈরাচার আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামতে। মনে পড়ে এক সভায় সভাপতিত্ব করেছিল এবং অন্য এক অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে মনোনীত হয়েছিল আমার বোন রেখা। সেই সভায় বক্তৃতা দিয়েছিলেন ছাত্রনেতা নূরে আলম সিদ্দিকী। সে তখন ঝিনাইদহ মডেল স্কুলের ছাত্র।
স্কুল জীবন শেষ করে এল ঢাকাতে। তখন সে বিবাহিত। আমিও স্কুল জীবন শেষ করে পাড়ি দিলাম রাজধানীর দিকে। ঢাকা কলেজের হোস্টেলে থাকি। ছোটবু থাকে স্বামীবাগে। প্রায় যেতাম, আড্ডা দিতাম। ছোটবুর কোলে এসেছে ফুটফুটে একটা ছেলে। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সে তখন এক পরিচিত মুখ। অভিনয় করে। ভর্তি হয়েছে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে বাংলা ডিপার্টমেন্টে।
কোনো এক সুবাদে তার সাথে আমার অভিনয় করার সুযোগ হয়েছিল। সালটা ১৯৬৮। ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে লায়লা সামাদের নির্দেশনায় মঞ্চস্থ হলো ‘হোয়াইট হেয়ার্ড গার্ল’। সেখানে ছোটবুর সাথে আমি, আমার মেজো ভাই, কেরামত মওলা, বুলবুল আহমেদ (তখনো সে সিনেমায় নামেনি), আর নায়ক রহমানের স্ত্রী কুমকুম ছিল। ক্রমেই ছোটবু ছোট পর্দায় অভিনয় শুরু করলো। আমরা দেখতাম। গর্বিত বোধ করতাম।
এক সময়ে আমি এলাম এই আমেরিকায়। ছোটবু এলো অনেক পরে। কথিত আছে, ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভাঙে। ছোটবুর বেলায় হলো তাই। এখানকার নাট্যগোষ্ঠী তাকে লুফে নিলো। একটার একটা নাটক মঞ্চস্থ হলো নিউইয়র্কের মঞ্চে। আজ আশিতে এসেও তাকে মাঝে মধ্যে দেখা যায় স্টেজে। এইতো সেদিন আমার আবারও সৌভাগ্য হয়েছিল ছোটবুর সাথে মঞ্চে শ্রুতি নাটক করার। শিল্পাঙ্গন নাট্যগোষ্ঠী আয়োজিত অনুষ্ঠানে আমরা করলাম ‘কর্ণ—কুন্তী—সংবাদ’।
ভালো থাকো ছোটবু। তোমার দীর্ঘায়ু কামনা করি।